Ads

সনাতন হিন্দু ধর্মকে জানুন কীতাব পড়ুন শিখুন এবং প্রশ্ন করুন. বিনামূল্যে সকল বইগুলো অনলিনেই সরাসরি পড়তে পারবেন অন্যদের পড়ার জন্য শেয়ার করবেন, নতুন পোস্ট পেতে ফাসেবুকে লাইক দিয়ে রাখুন |

একম ব্রহ্ম কি?

রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭
হিন্দু ধর্মের মতে স্রষ্টা ও সৃষ্টি ।
আজকের এই পোস্টটি পড়লে আপনি স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন ।
     সৃষ্টির শুরু 0 (শুন্য) ওম, এই ওম হলেন নিরাকার, অনেক শাস্ত্রে উনাকে ব্রহ্ম বলেও অবিবাহিত করা আছে, যেমন বেদএ বলা আছে একম ব্রহ্ম দ্বিতীয় নাস্তি, অর্থাৎ ব্রহ্ম ছাড়া সকলেই মিথ্যা, বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় ব্রহ্ম ই হলেন সবকিছু যা কিছু আছে তাই ব্রহ্ম যেমন চন্দ্র সূর্য আকাশ মহাকাশ গাছ পালা জীব জন্তু ইত্যাদি ইত্যাদি যা কিছু আছে সবকিছু মিলেই একম ব্রহ্ম পক্ষান্তরে তাহার ব্যাতিত সব মিথ্যা যেমন আমি যদি বলি নরেন্দ্র মোদীর দশটা মাথা আর বিষ টা হাত আছে সবাই বলবে না এটা মিথ্যা তাহার একটা মাথা ও দুইটা হাত আছে তেমনি ব্রহ্ম হলেন আছে বাকি কিছুই নাই । অর্থাৎ ব্রহ্ম হলেন সবকিছু, ব্রহ্ম হলেন ধারক বেদ অনুসারে তাই তিনি নিরাকার এবং তাহার কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, তাহার কোনো মূর্তি নেই, তাহার কোনো শরিক নেই তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা ।
  মোটামুটি শুরুটা সবাই বুঝছেন এবার আমরা জানবো তাহলে ব্রহ্ম কে অথবা কি? কেন তিনি নিরাকার? কেন তার কোনো মূর্তি নেই তার কোনো শরিক নেই ? তিনি নিজেই নিজে কিভাবে সৃষ্টি হলেন?
   ব্রহ্ম কে অথবা কি:-  ব্রহ্ম হলেন সবকিছু, মনে করুন একটা বড় আলমারি তার ভিতর জামা কাপড় টাকা পয়সা সোনা দানা হীরা জোহরত ইত্যাদি মজুত করে রাখা আছে পক্ষান্তরে বিড়ি সিগারেট গাজা মদ ইত্যাদি মজুত নেই । এখন ওই যে আলমারী ঠিক তেমনি ব্রহ্ম । বেদ অনুসারে পৃথিবী নক্ষত্র গ্রহ উপগ্রহ সাগর মহাসাগর ইত্যাদি কিছু নিদৃষ্ট জিনিষ নিয়ে হয় একটা ব্রহ্মমান্ড, গীতা অনুসারে অনন্ত ব্রহ্মমান্ড নিয়ে ব্রহ্ম । সুতরাং ব্রহ্ম হলেন যা কিছু এই সৃষ্টিতে আছে সবকিছু । ব্রহ্ম কোনো নিদৃষ্ট ব্যক্তি বা বস্তু নন পৃথিবীতে যেমন সকল প্রাণীর বসবাস ব্রহ্মতে ও তেমনি অনেক পৃথিবী আর ব্রহ্মমান্ডের বসবাস সবকিছুর যেমন শেষ আছে এই ব্যাপারটা ও এখানেই শেষ অর্থাৎ ব্রহ্মর বাইরে কিছুই নাই ।
ব্রহ্ম কেন নিরাকার?
উত্তর অত্যান্ত সহজ আকার কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর থাকে, পৃথিবী একটা বস্তু তাই তার আকার আছে, মানুষ একটি ব্যাক্তি তাই তার আকার আছে ব্রহ্ম কোনো ব্যক্তি বা বস্তু নন তাই তার আকার নাই ।
ব্রহ্ম যদি কোনো ব্যক্তি বা বস্তু না হন তাহলে তিনি কি জিনিস?
উত্তর সিম্পল আগেই বলছে বেদ অনুযায়ী ব্রহ্ম ব্যাতিত দ্বিতীয় সব নাস্তিক বা নাই, ভাই বাতাস উপলব্দি করা যায় দেখা যায় কি? যায় না বাতাস কি কোনো ব্যক্তি বা বস্তু? না! তাপ উপলব্দি করা যায় দেখা যায় কি? এমনি অনেক কিছুই আছে যা দেখা বা ছোয়া বা আটকানো যায়না সেগুলো না কোনো ব্যক্তি না কোনো বস্তু সবটাই উপলব্ধি, ব্রহ্ম হলেন উপলব্দি ।
কেন তার কোনো মূর্তি নেই ?
 যেহেতু তিনি কোনো ব্যক্তি বা বস্তু নন যাকে দেখা ছোয়া বা ধরা যায় না, জানাকে শুধু উপলব্ধি করা যায় তাহার মূর্তি কি করে হবে, তাই হিন্দুরা ব্রহ্মর কোনো মূর্তি বানায় নাই ।
তিনি নিজে নিজে কি করে সৃষ্টি হলেন?
 তিনি শুন্য থেকে সৃষ্টি হলেন, যেমন আমি এই পোস্টটি করার আগে এই জায়গাটা শুন্য ছিল আমার পোস্টটি এই শুন্য স্থানটা পূর্ণ করছে ঠিক তেমনি ব্রহ্ম এই অনন্ত ব্রহ্মমান্ড পূর্ন করেছেন উপলব্ধির দ্বারা ।

 ব্রহ্ম কি সৃষ্টিকর্তা?
উত্তর না ।
কেন?
কারণ ব্রহ্ম হলেন নিরাকার একটা উপলব্দি । আর শুধু উপলব্ধি কিছু সৃষ্টি করতে পারে না ।
  যেমন শব্দ ধনী উৎপন্ন করতে পারে কিন্তু ব্যাক্তি সেই ধনির দ্বারা কম্পনের সৃষ্টি করতে পারে ।
উৎপন্ন করা আর সৃষ্টি করার মধ্যে কি পার্থক্য ?
  উৎপন্য করা মনে হলো উৎপাদন করা যেমন জমিতে ফসল উৎপাদন করা । সৃষ্টি করা অর্থ তৈরি করা যেমন সেই উৎপাদিত দ্রব্য দ্বারা পিঠা তৈরি করা । সৃষ্টি করার জন্য উৎপাদনের প্রয়োজন হয় কিন্তু উৎপাদনের জন্য সৃষ্টি করা যায় না ।
  ব্রহ্ম হলেন উৎপাদনের উপকরণ আর তার উৎপাদিত ফসল হলেন স্রষ্টা । উৎপাদন উপকরণ কখনো বিনষ্ট হয় না বা ধ্বংস হয় না যেমন পাঠ উৎপাদিত হয় মাটি পানি থেকে । পাট থেকে আমরা জামা কাপড় ইত্যাদি সৃষ্টি করি আমাদের দ্বারা সৃষ্ট জামাকাপড় একদিন নষ্ট হয়ে আবার মাটিতেই ফিরে যায় ।
   আশাকরি পাঠক গণ এত সময়ে শুরুটা বুজে গেছেন, তো স্রষ্টার উৎপাদক যদি ব্রহ্ম হয় তবে স্রষ্টা কে?
  হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ব্রহ্মর উৎপাদিত ফসল হলন শ্রী হরি বিষ্ণু আর বিষ্ণু থেকে উৎপত্তি ব্রম্মা ও মহেশ ।
তো কথা কি দাঁড়ালো ব্রহ্ম থেকে উৎপত্তি বিষ্ণু আর বিষ্ণু থেকে উৎপত্তি ব্রম্মা ও মহেশ, অর্থাৎ উৎপাদন অংশ শেষ । এবার  সৃষ্টি অংশে যাবো আমরা :-
(উৎপত্তি অংশে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাবেন ।)
   ভগবান বিষ্ণু ব্রম্মা এবং শিব মূলত একই কার্য ভেদে আলাদা ব্রম্মা সৃষ্টি করার কাজে মহাদেব শিব ধ্বংস করার কাজে আর সয়ং প্রভু বিষ্ণু রক্ষা ও পালন করার কাজে নিযুক্ত থাকেন । এই ত্রিদেব দের নিয়ে আমি পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করবো ।
    এবার আসি সৃষ্টির শুরুতে :- ঋগ্বেদ অনুযায়ী এই উপলব্ধ বিস্ব ব্রহ্মমান্ডে যা কিছুই আমরা আজ দেখতে পাই না কেন এই সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি সবকিছুই একটা সময় একত্রে পুঞ্জীভূত ছিল, সন্তান যেমন মাতৃ গর্ভের মাধ্যমে জন্ম নেয় তেমনি এই সারা সৃষ্টির যে গর্ভ থেকে জন্মেছে তাকে বলা হয় হিরন্ন গর্ভ ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণু এই হিরণ গর্ভের মাধ্যমে সমস্ত সৃষ্টির রচনা করেন, সকল কিছুই এই গর্ভের ভিতর বিদ্যমান ছিল আর এই গর্ভ অতি তাপমাত্রায় প্রভাবিত হয়ে বিস্ফোরিত হয় এবং সব কিছুর সৃষ্টি হয় । বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যে বিগব্যাংক তথ্য আবিষ্কার করলেন তা ঋগ্বেদ এ হাজার হাজার বছর আগে থেকে লিখা আছে।
   যেহেতু ব্রহ্ম একটি শুন্য স্থান তাই হিরণ্য গর্ভপাত হবার কারণে দরুন গতি প্রাপ্ত বস্তু তার বেগে চলমান আছে সমবেগে সরল পথে, আর স্থির বস্তু গুলো স্থির অবস্থায় ই আছে (বেদ থেকেই নিউটন তার গতির সূত্র আর মহাকর্ষ বলিও সূত্র পান) ।
    যেমন নব গ্রহ জ্যোতির্বিজ্ঞান বেদেরই অংশ সূর্য সমস্ত সৌরমন্ডল নিয়ে ঘুরে, পৃথিবী তথা অন্য গ্রহ গুলো সূর্যকে নিয়ে ঘোরে । আর হিরণ্য গর্ভ থেকে উৎপন্য এই সমস্ত সৃষ্টিকে ব্রহ্মমান্ড বলে।
    সৃষ্টিকর্তা অতঃপর এই ব্রহ্মমান্ডে প্রানের সঞ্চার করেন আত্মার মাধ্যমে পরমআত্মা অর্থাৎ ব্রম্মা দেব এর মাধ্যমে, আত্মা পরম আত্মা হতে আসে পৃথিবীতে আত্মা পৃথিবীতে আসার পর তিন ভুবনের মায়াজাল চক্রে আবদ্ধ হয়ে যায়, তিন ভুবন হলো স্বর্গ, মর্ত ও নরক, স্রষ্টা সমস্ত আত্মার সমানতা বজায় রাখার জন্য তিন ভুবনের সৃষ্টি করেছেন "আত্মা পৃথিবীতে কর্ম করে মুক্তিলাভের জন্য আসে - কিন্তু পার্থিব মায়া আর পঞ্চভুতের শরীর আর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে সে তার মূল রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, এক জন্মে সে তার কর্মের দ্বারা মুক্তি প্রাপ্ত হতে পারেন না, তাকে বার বার জন্ম নিতে হয়, মৃত্যুর পর তার কর্মের ফল অনুযায়ী ক্ষনিকের বিশ্রামের জন্য স্বর্গ লাভ হয়, অন্য দিকে খারাপ কর্ম তথা আরাম আয়েস ও ধনির দুলাল হয়ে বসে বসে জীবন কাটানোর জন্য নরক প্রাপ্ত হয় এবং নরকে সম পরিমান কাজ করে জীবন এর সমতা প্রাপ্ত করতে হয় অন্ততায় স্বর্গ প্রাপ্ত আত্মা আর নরক প্রাপ্ত আত্মা উভয়কেই আবার মর্ত ভূমিতে জন্ম গ্রহণ করতে হয়। নিষ্কাম কর্মের দ্বারা প্রত্যেক আত্মাই কোনো না কোনো ভাবে পরম আত্মা প্রাপ্ত হন, গীতায় কর্ম যোগ অনুযায়ী সকাম কর্ম যার ফল আত্মা সরাসরি পেয়ে যান, কাজ করলে টাকা, প্রার্থনা করার সময় মানত ও ফল গ্রহণ ইত্যাদি অন্যদিকে নিষ্কাম কর্ম যার জন্য কর্তা ফলের আসা করেন না কিন্তু কর্ম সম্পাদন করে ফেলেন সেই কর্মের ফল সঞ্চয় হিসাবে স্রষ্টার কাছে থাকে এবং নিদৃষ্ট পরিমান হয়ে গেলে স্রষ্টা সেই আত্মার ফল স্বরূপ আত্মার মুক্তি দান করে থাকেন, কর্ম অনুযায়ী মানুষ বা অন্যান্য জীব পরবর্তী জন্ম পায়, কেউ কানা কেউ খুড়া কেউ ধোনি কেউ গরিব সব তার পূর্ব জন্মের কর্মের ফল অনুযায়ী হয়ে থাকেন । যুগ শেষে স্রষ্টা অবতার এর মাদ্ধমে অপরিতাপত্ত আত্মা যার সঞ্চয় হয় না তাদের মুক্তি দেন আর নব সূচনা করে যান ।
    দেব দেবী হলেন একটা সমাধান সৃষ্টির এ তথ্যের সমাধানের জন্য ধরে নেওয়া একটা সত্তা, যারা সৃষ্টি সঞ্চলনের জন্য স্রষ্টার পক্ষ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মী, গীতায় ঈশ্বর বলে গেছেন যারা তাদের পার্থিব কামনা বাসনা পূরণের জন্য বিভিন্ন দেব দেবীর পূজা করে তাদের ভক্তি স্থাপন করেন আমিই তাদের ফল দেই, কিন্তু যারা আমারই সরনাপন্ন হন তারা আমাতে বিলীন হয়ে যায় তথা মুক্তি লাভ করে, কেউ 33 কোটি দেবতার কেউ 100 কেউ 500 তো কেউ 10, অন্য দিকে কেউ সাধু মহাপুরুষদের পূজা করেন তাদের সন্তুষ্ট করার জ্ন্য এই ভক্তি স্থাপনের জন্য ভক্ত কামনা বাসনা করেন, কিন্তু পরমআত্মার ভক্তিতে কামনা বাসনা থাকে না থাকে শুধু মুক্তির আর্তনাদ, হে আত্মা আজ তুমি ধোনির দুলাল কাল তুমি রাস্তার ফকির হবে রাস্তা ঘাটে ঘুমাবে, পুটপাতের পচা খাবার খাবে আজ যে জীবন তোমার কাছে মধুময় কাল তা বিষ হয়ে যাবে, আজ যৌবন কাল বুড়া, তাই মুক্তি লাভের খোঁজ করো ।
 জয় শ্রী কৃষ্ণ-
৮টি মন্তব্য on "একম ব্রহ্ম কি?"
  1. এমন সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  2. এক কথা মালিক এর দশন না লাভ করিলে তার কোন গতি নাই আর আপনি যানেন তো ভগবান বিষ্ণু বলেগেছেন আমার পর যিনি আগমনকারী তার মার নাম আমেনা বাবার নাম আব্দুল্লাহ মরুদেশে জম্ন নিবে ১২তারিখ তাকে ফলো করিতে, দেখুন স্রষ্টার খেলা যিনি চন্দ্র পুজারি কেরালার রাজা তিনি দেখলেন তার দেবতা কে যেনো ২টুকরোটুকরো করে ফেললো তিনি রওয়ানা হলেন সেই মরুদেশে গিয়ে দেখে তার বাণী নিয়ে আসার সময় পথমধ্য মারা গেলেন সব স্রষ্টার খেলা সৃষ্টিকারী একজন আছে তাকে ধরা যায় না আবার ছুয়া যায়না কিন্তু তার সাথে প্রেম করিলে সব পাওয়া যায় মালিক ভরসা।

    উত্তরমুছুন
  3. আপনি কিছু গোজা মিল দিচ্ছেন এটা ঠিক না মুক্তির পথ একমাত মালিক এর দরশন যে যুগে যে ভাবে পাবে তুমি তাকে সে ভাবে সেই রুপে আলিঈন করো তাকে স্রষ্টা এক অভিন্ন তোমার মুক্তি তার কাছ।, মালিক ভরসা।

    উত্তরমুছুন
  4. এই ব্রহ্মই আসলে সেই ঈশ্বর কণা যার থেকে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে সমগ্র গ্রহ,নক্ষত্র, ধূমকেতু, নীহারিকা, দেবতা সমেত। আমার প্রশ্ন হলো বিগ ব্যাং ছাড়াই ব্রহ্ম থেকে বিষ্ণু কীভাবে উৎপাদিত হলেন? শিবকে দেবাদিদেব বলা হয় কেন ? তবে সবচেয়ে প্রাচীন দেবতা কে মহেশ্বর না বিষ্ণু?

    উত্তরমুছুন